আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদের ভাষায় ‘‘চন্দ্রশেখর পর্বত হইতে দক্ষিণে দৃষ্টি ফেরাইলে অনন্ত দিকচক্রবাল সন্দ্বীপকে ব্যাবিলনের শূন্যোদ্দ্যানের মত প্রতীয়মান হইবে’’। হাজার বছরের সভ্যতার লীলাভূমি সন্দ্বীপে বহু ক্ষণজন্মা পুরুষ জন্মগ্রহন করেছেন। এ সন্দ্বীপ জন্ম দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিষ্ট পার্টির জনক কমরেড মুজফফর আহমদের মতো রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক রাজকুমার চক্রবর্তীর মতো দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান ও মাওলানা অজিউল্লাহর মতো মেধাবী আলেম, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামী আবু তোরাব চৌধুরীর মতো বীরযোদ্ধা, চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের সাহসী সৈনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের কৃতি ছাত্র বিপ্লবী লালমোহন সেন, আলীয়া নেছাবের মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা খানবাহাদুর মাওলানা জিয়াউল হক, মৌলভী বসির উদ্দীন এর মতো গর্বিত সন্তান। বাংলা ভাষা চর্চায় ও সন্দ্বীপের রয়েছে অসামান্য ভূমিকা। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ রচয়িতাদের মাঝে স্থান করে নিয়েছিলো আমাদের মীননাথ, সপ্তদশ শতাব্দীতে মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে সাহসী উচ্চারণ করেছিলেন আমাদেরই একজন কবি আবদুল হাকিম। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ফ্রন্ট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম প্রধান সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, বেতারের প্রথম কণ্ঠস্বর আবুল কাশেম সন্দ্বীপ এবং ঐ বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ১১ জনের মধ্যে ৩ জনই সন্দ্বীপের গর্বিত সন্তান। দেশবরেণ্য শিশুসাহিত্যিক আফলাতুন এবং বর্ষীয়ান চিত্রশিল্পী অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় এ সন্দ্বীপের অহংকার। বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেও রয়েছে উলেস্নখযোগ্য সংখ্যক যোগ্যতাসম্পন্ন, মেধাবী ও দায়িত্বশীল সন্দ্বীপ- সন্তান।
EX.Member of Parlament Name : Mostafijur Rahaman |
EX.Member of Parlament Name : Obaidur Rahaman |
EX. Chairman Rahamatpur Name :MD. Sekandor Hosen |
MD.Humayun Kabir Name :MD.Humayun Kabir |
A.A.M Yusuf M.A Name :A.A.M Yusuf M.A |
Master Fazlul Ohab Name :Master Fazlul Ohab |
Name : |
Abdul Moktadir Name :Abdul Moktadir |
Pricipal Monir Ahmed Name :Pricipal Monir AhmedBR> Father Name : |
Master Nurul Anwer Name :Master Nurul Anwer |
Mirza Anwer Name :Mirza Anwer |
Aflatun Name :Aflatun |
Halim Ullah Khoddor Name :Halim Ullah Khoddor |
Name : |
Sibsongkor Name :Sibsongkor Rahman |
Name : |
Advocate Mojammel Hosen Name :mojammel Hosen |
Alhaj Nurul Amin Name :nurul |
KAZI ABDUL AOWAL Name :KAZI ABDUL AOWAL |
Late.HeadMaster Abul khayer khan Name :Late.HeadMaster Abul khayer khan |
Abul Kasem Sandwip Name :Abul Kasem Sandwip |
Ex. Chairman Kalaphania Name :Abu Sufian |
Sultan Ahmmod Name :Sultan Ahmmod M.S.c |
Abul Kasem Sandwip Name :Abul Kasem Sandwip |
Name : |
Name : |
Name : |
Abdul Kium Name :Abdul Kium |
Captain Sekandor Hosen Name :Captain Sekandor Hosen |
Jamsedur Rahman Name :Jamsedur Rahman |
EX.Chairman Kalapania Name :Chairman Shab Mia |
Comrade Mojaffor Ahammed Name :Comrade Mojaffor Ahammed |
Ex. Chairman Horis Pur Name :Ex. Chairman Golam Kibria Chowdhury Father Name : Address : |
EX. Chairman Ghachua Name :Safikul Moula |
Mohammed sha bangali Name :Mohammed sha bangali |
MD.Jahangir Alam Name :MD.Jahangir Alam |
সন্দ্বীপের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের যাঁরা নির্মাতা তাঁদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। বর্তমান প্রজন্ম তাঁদের অবদানের ব্যাপারে খুব সামান্যই জানে। আমরা পর্যায়ক্রমে তাঁদের সবার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি এবং সম্ভবক্ষেত্রে ছবিসহ উপস্থাপনের আশা রাখি। কারণ অতীতকে বাদ দিয়ে বর্তমান হয়না। অতীতের সাথে গভীর যোগসূত্র স্থাপন করতে পারলেই ভবিষ্যতে আলোকিত সন্দ্বীপ নির্মাণ সম্ভব হবে। পাঠকগণ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন, আমাদের উদ্যোগকে আরো সমৃদ্ধ করবেন এ প্রত্যাশা করছি।
ইতিহাস পাঠে জানা যায় দেলওয়ার খাঁ (১৫৮৫-১৬৬৫) প্রকাশ সন্দ্বীপের দিলাল রাজার দুই কন্যা ও একাধিক পুত্র ছিলো। তবে পুত্রদের মধ্যে শুধুমাত্র শরীফ খাঁর পরিচয় ইতিহাসে পাওয়া যায়। কিন্ত্ত অন্যান্য পুত্রদের বৃত্তান্ত ইতিহাসে পাওয়া যায় না। দুই কন্যার মধ্যে মুছাবিবি ছিলেন বড় আর মরিয়ম বিবি ছিলেন ছোট। মুছাবিবির বিয়ে হয় সন্দ্বীপ পরগণার জমিদার চাঁদ খাঁর সাথে। আবু তোরাব হলেন চাঁদ খাঁর প্রপৌত্র। চাঁদ খাঁর মৃত্যুর পর তার আট আনা চার গণ্ডা দুই কড়া জমিদারী, পুত্রগণ মুসলমান আইনানুযায়ী ভাগ করে নেন।জুনদ খাঁর পর তাঁর পুত্র মোহাম্মদ রাজা এবং মুকিম খাঁর পর তাঁর পুত্র মোহাম্মদ হোসেন হারাহারি ভাবে জমিদারী প্রাপ্ত হন। মোহাম্মদ রাজার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র আবু তোরাব চার আনা দুই গণ্ডা তিন কড়া জমির উত্তরাধিকারী হন।
১৭৬৩ সালে ঠক, প্রবঞ্চক, ষড়যন্ত্রকারী গোকুল ঘোষাল ছলে বলে কৌশলে সন্দ্বীপ পরগণার বার আনা জমিদারী আত্মসাৎ করে অত্যাচার, জুলুম সহ্য করতে না পেরে আবু তোরাব সন্দ্বীপের সমস্ত জমিদারদের সংগঠিত করে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
ইংরেজরা এই দেশ অধিকার করলেও আবু তোরাব তাদের অধীনতা স্বীকার না করায় ১৭৬৭ সালে তাঁর সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ বাঁধে। মেজর গ্রান্ট, মেজর নলিকিন্স, ক্যাপ্টেন এলারকার, ক্যাপ্টেন প্লাউডেন ও মাস্তেল এর নেতৃত্বে বিশাল ও সুপ্রশিক্ষিত ইংরেজ বাহিনীর সাথে আবু তোরাব চৌধুরী ও তাঁর সেনাপতি মালকাম সিং এর নেতৃত্বাধীন অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র বাহিনীর সাথে সন্দ্বীপের হরিশপুর গ্রামে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ঐ যুদ্ধে বীরপুরুষ আবু তোরাব চৌধুরী বীরত্বের পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করে সম্মুখ সমরে শাহাদাত বরণ করেন। এটাই সন্দ্বীপের শেষ স্বাধীনতা সংগ্রাম। ইংরেজরা প্রথমত যুদ্ধে সুবিধা করতে পারেনি। শেষে আবু তোরাব চৌধুরীর ভগ্নিপতি মোহাম্মদ মুরাদ চৌধুরী সৈন্যদলের কয়েকজন জমাদারসহ ইংরেজদের সাথে যোগ দেয়ায় তাঁর এক জমাদারের হস্তে প্রাণ ত্যাগ করেন। বীর আবু তোরাব চৌধুরীর মৃত্যুর সাথে সাথে সন্দ্বীপে দিলাল রাজার বংশধরের বীর শেষ শিখা নির্বাপিত হয়।
মৌলভী বছির উদ্দীন
যে সকল বিদগ্ধ মনীষীর আগমনে প্রাচীন সন্দ্বীপ ধন্য হয়েছে তাঁদের মধ্যে মৌলভী বছির উদ্দীন অন্যতম। তাঁর জন্ম সন্দ্বীপ উপজেলার বাউরিয়া গ্রামে ১৭৮৪ সালের কোন এক শুভদিনে শুভক্ষণে এবং মৃত্যু ১৮৭৪ বা ১৮৭৬ সালে। তাঁর পিতার নাম মৌলভী মোহাম্মদ দানিছ নিয়াজী। চাচার নিকট তিনি প্রাথমিক মিক্ষা লাভ করেন। তৎকালীন সময়ে সন্দ্বীপে উচ্চ শিক্ষার কোন প্রতিষ্ঠান না থাকায় তিনি কলকাতা গভর্ণমেন্ট মাদ্রাসায় ভর্তি হন ১৭৯৫ সালের কোন এক সময়ে। উক্ত মাদ্রাসা কলেজ হতে তিনি গ্রামার এণ্ড সিনট্যাক্স, ম্যাথ এণ্ড অ্যালজেব্রা, জিওমেট্রি, ন্যাচারাল ফিলসফি, রিটোরিক লজিক, প্রিন্সিপাল অব ল, ল, জেনারেল লিটারেচার এবং ফারসী ভাষায় অনুবাদকৃত গভর্ণমেন্ট রেগুলেশন প্রভৃতি শাখায় দীর্ঘ সাত বৎসর অধ্যয়ন করে সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন। বছির উদ্দীন ১৮৪৮ সালে উচ্চতর ডিগ্রী লাভ করেন এবং সাথে সাথে তাঁকে ব্রিটিশ রাজ “গভর্ণমেন্ট মাদ্রাসা কলেজ”এর “ল” অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেন। ব্রিটিশ ভারতে এটি একটি উচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন চাকুরী ছিল। মৌলভী বছির উদ্দীনের একাডেমিক সার্টিফিকেট এবং “ল” অফিসার হিসেবে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেন Lt Col S.D.Railey.
প্রথম বাঙালী গ্র্যাজুয়েট কে? এ সম্পর্কে প্রথম আলো পত্রিকার কলকাতার রিপোর্টার অমর সাহা ২০০৬ সালের ৩ জুলাই তারিখে একটি মজার রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। রিপোর্টটি হলো, প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বি.এ পাস করেছিলেন গ্রেস নিয়ে। তাঁকে ৭ নম্বর গ্রেস দেয়া হয়েছিলো। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রেস নিয়ে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে বি.এ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫০ বছরের পুরনো নথি ঘাটতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে বঙ্কিম চন্দ্রের গ্রেস নিয়ে পাসের কথা। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ গ্র্যাজুয়েট বের হয় ১৮৫৮ সালে মোট ১০ জন যাঁদের মধ্যে বঙ্কিম চন্দ্র অন্যতম ছিলেন। এরাই বাংলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট বলে কথিত ছিলো। অথচ মৌলভী বছির উদ্দীন “গভর্ণমেন্ট মাদ্রাসা কলেজ” হতে ৯ টি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী প্রাপ্ত হন ১৮৪৮ সালে। তাহলে মৌলভী বছির উদ্দীনই এখন পর্যন্ত প্রথম বাঙালী গ্র্যাজুয়েট।
মৌলভী বসির উল্যাহর পিতার নাম মির্জা আমিন উদ্দীন খান। ১৮৮০ কিংবা ১৮৮১ খৃষ্টাব্দে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন এবং তথায় দু’বছর অধ্যয়ন করেন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষায়ও শিক্ষিত ছিলেন। সন্দ্বীপে ইংরেজী শিক্ষার প্রথম প্রদর্শক স্বনামধন্য বসির উল্যাহ চৌধুরী। তিনি দ্বীপবাসীদের মনে এ বিশ্বাস জন্মাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, ইংরেজী শিক্ষায় পশ্চাৎপদ হয়ে তারা অনুন্নত অবস্থায় পতিত হয়েছে। বসির উল্যাহ চৌধুরী কার্গিল হাই স্কুল ও বশিরিয়া মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তাঁরই প্রদত্ত জমির উপর উক্ত দু’টি প্রতিষ্ঠান ও সন্দ্বীপ ডাকবাংলো গড়ে উঠে। তাঁরই কঠোর পরিশ্রমের ফলে ১৯০৬ খৃষ্টাব্দ হতে মূল ভূখণ্ড হতে সর্বপ্রথম স্টীমার যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র থাকাকালীন তিনি সাব-রেজিস্ট্রার পদে চাকুরী নিয়ে বহু বছর নোয়াখালী কাটিয়ে সন্দ্বীপে বদলী হন এবং দীর্ঘ ২৫ বছর চাকুরীর পর অবসর গ্রহণ করেন। তিনি গ্রামে গ্রামে তুলার চাষ ও হস্ত চালিত তাঁত বসাবার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছিলেন। হ্যাণ্ডলুমের উপকারিতা বুঝতে পেরে ঘরে ঘরে বস্ত্র বয়ন আরম্ভ হয়েছিলো। তিনি ইংরেজীতে একখানা উ৭কৃষ্ট আরবী ব্যাকরণ রচনা করেন। তাঁরই একান্ত প্রচেষ্টায় প্রবেশিকা পরীক্ষায় কোরান অন্যতম পাঠ্যরূপে গৃহীত হয়েছিলো। তাঁর প্রদত্ত সাহায্যের উপর নির্ভর করে অনেক মেধাবী দরিদ্র সন্তান স্বনামধন্য ব্যক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন। তিনি বৃদ্ধ বয়সে দুটি বিশেষ দুঃখ পেয়েছিলেন। তাঁর জামাতা ফজলুল হক এম.এ এবং জ্যেষ্ঠপুত্র এ.কে.এম.রুহুল আমিন চৌধুরী বি.এ অকালে মৃত্যুর কবলে পতিত হন।
বসির উল্যাহ চৌধুরী আজ আর নেই। কিন্ত্ত রয়েছে তাঁর সুমহান কীর্তিগাঁথা। যে কীর্তিগাঁথা তাঁকে চিরভাস্বর করে রাখবে সন্দ্বীপের জনগণের মনের নিভৃত নিকেতনে।
অনঙ্গ মোহন দাস সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিছুদিন মোক্তারী করার পর নোয়াখালী ও ময়মনসিংহ জেলার জমিদারী এস্টেট এর ম্যানেজার পদে চাকুরী করেন। এরপর চাকুরী ত্যাগ করে সন্দ্বীপের লুপ্ত কুটির শিল্পের গৌরব পুনরুদ্ধারে আত্মনিয়োগ করেন। এতে তিনি কৃতকার্যও হয়েছিলেন। কুটির শিল্প হিসেবে সাবানকে জনপ্রিয় ও সুপ্রতিষ্ঠিত করবার জন্য তিনি “ঢাকার কাপড় কাচা সাবান প্রসত্তত প্রণালী” নামে একখানা পুস্তক প্রকাশ করেন। নারিকেল তেলের পরিবর্তে পুণ্যাল তেল দিয়ে সাবান প্রসত্তত করা যায় কিনা তিনি সে বিষয়েও চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন। ঘরে ঘরে চরকায় সুতাকাটা ও সে সুতা দ্বারা কাপড় প্রসত্তত হয়ে যাতে দরিদ্রের মোটা বস্ত্রের সংস্থান হতে পারে ঐ জন্য অনঙ্গ বাবুর চেষ্টার অবধি ছিলোনা। ১৯৩৭ খ্রীষ্টাব্দ হতে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের সন্দ্বীপ শাখার সাথে যুক্ত ছিলেন। রাজকুমার চক্রবর্তী ও অনঙ্গ মোহন দাস (মোক্তার) ১৯২৪/২৫ সালে ‘সন্দ্বীপের ইতিহাস’ রচনা করেন। এটি বাংলাদেশের আঞ্চলিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান নিদর্শন। এ গ্রন্থের প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেন অনঙ্গ মোহন দাস। ঐ ইতিহাসের দ্বাদশ অধ্যায় রচনা করেন শ্রীশ চন্দ্র চৌধুরী এম.এ, বি.টি। এতদ্ব্যতীত অনঙ্গ বাবু “সন্দ্বীপের গুহ বংশ ও প্রাণহরি বাবুর সংক্ষিপ্ত জীবনী” গ্রন্থও রচনা করেন। অনঙ্গ মোহন দাস ও রাজকুমার চক্রবর্তী সন্দ্বীপের প্রাক-ঐতিহাসিক ও ঐতিহাসিক যুগের কতকগুলো বিচ্ছিন্ন ইতিহাস প্রবন্ধাকারে ১৯১৬-১৯১৭ খ্রীষ্টাব্দে কুমার অরুণ চন্দ্র সিংহ বাহাদুরের সম্পাদনায় প্রকাশিত “নোয়াখালী” নামক ত্রৈমাসিক পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
১৮৮৯ সালে মুজফ্ফর আহমদ সন্দ্বীপের বৃহত্তম গ্রাম মুছাপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মনসুর আলী মোক্তার। মুজফ্ফর আহমদ প্রথমে মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। পরে মাদ্রাসা ছেড়ে দিয়ে কার্গিল হাই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি নোয়াখালী জিলা স্কুল হতে ১৯১৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করেন। আই.এ.পরীক্ষা ফেল করে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সমাপ্তি ঘটে।
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়। এর প্রভাব মুজাফ্ফর আহমদের ওপর পড়ে। তিনি ১৯২০ এর দিকে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মুজাফ্ফর আহমদ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের জনক। মুজাফ্ফর আহমদ ‘বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির’ সহকারী সম্পাদক ছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও মুজাফ্ফর আহমদের যুগ্ম সম্পাদনায় কলকাতা থেকে “দৈনিক নবযুগ” বের হয়েছিল। মুজফ্ফর আহমদ সাপ্তাহিক নবযুগ , গণবাণী পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। “মিরাট কমিউনিস্ট ষড়যন্ত্র মামলা” (১৯২৯-৩৩) ছিল পৃথিবীর বৃহত্তম ও দীর্ঘতম রাষ্ট্রীয় বিচার। এই মামলার অন্যমত আসামী হিসেবে মুজফ্ফর আহমদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে আপীলে সাজাক্রমে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। মুজফ্ফর আহমদের লেখা “ভারতের কমিউনিস্ট গড়ার প্রথম যুগ”, “প্রবাসে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন”, আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি” সমকালের কথা প্রভৃতি গ্রন্থ বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। মুজফ্ফর আহমদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কলকাতার রিপন স্ট্রীটের নাম পরিবর্তন করে মুজফ্ফর আহমদ সরণী করা হয়েছে। মহাজাতি সদনে রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষ বসুর সাথে মুজফ্ফর আহমদের তৈল চিত্র হয়েছে স্থাপিত। কলকাতায় অবস্থিত সি.পি.আই. (এম) এর দফতর ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে মুজফ্ফর আহমদ ভবন। এখানে স্থাপিত হয়েছে তাঁর প্রস্তর মূর্তি। ৫ আগস্ট ১৯৮৯ মুজফ্ফর আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ভারতীয় আইন সভায় তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। মুজফ্ফর আহমদ একমাত্র কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। তাঁর জামাতা কবি আব্দুল কাদির আমাদের সাহিত্যাঙ্গনে এক অতি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি মাহে নও পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
সেকান্দর হোসেন মিয়া সন্দ্বীপ থানার দুবলাপাড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী আহমদ মিয়া মোক্তার। মোক্তার সাহেব কার্গিল হাই স্কুলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ১৩৩০ বাংলা সালে আহমদ মিয়া জিলা বোর্ডের মেম্বার ছিলেন। এ সময় কালাপানিয়া রাস্তার সর্বাঙ্গীন উন্নতি হয়। সেকান্দর হোসেন মিয়া বশিরিয়া মাদ্রাসা ও দেওবন্দে শিক্ষালাভ করেন। ১৯২০ সালের পূর্বে সন্দ্বীপে কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ছিলোনা। সেকান্দর হোসেন মিয়া ১৯২০ সালে জে.এম.সেন গুপ্তের উপস্থিতিতে সন্দ্বীপে কংগ্রেস কমিটি এবং খিলাফত কমিটি গঠন করেন এবং তিনি স্বয়ং উভয় কমিটির সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। ১৯২২ সালে সি.আর.দাশের সঙ্গে গান্ধীজির মনোমালিন্য হয়। কংগ্রেসের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে সিআর.দাশ স্বরাজ্য দল গঠন করেন। সেকান্দর হোসেন কংগ্রেস, খিলাফত এবং স্বরাজ্য দলের পক্ষে সন্দ্বীপে তাঁর ক্রিয়াকর্ম অব্যাহত রাখেন। সে সময় একই ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক দলের সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারতেন। সেকান্দর হোসেন ১৯৩৭ সালে সন্দ্বীপে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি স্বয়ং এর সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। অথচ তখন নোয়াখালী জিলা মুসলিম লীগও গঠিত হয়নি। ১৯২৭ সালে সন্দ্বীপে যে ‘মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন’ গঠিত হয় সেকান্দর হোসেন তারও প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী ছিলেন। এটিই সন্দ্বীপের প্রথম মুসলিম রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন। সেকান্দর হোসেন ১৫ বছর যাবৎ মুসলিম এডুকেশন ফাণ্ডেরও সেক্রেটারী ছিলেন। তিনি ১৯২১ সালে চট্টগ্রামে কংগ্রেস অধিবেশনে , ১৯২৮ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে ১৯৪০ সালে নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক ২৭ তম অধিবেশনে, ১৯৪২ সালে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সিরাজগঞ্জ অধিবেশনে সন্দ্বীপের প্রতিনিধিত্ব করেন। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কোন অধিবেশনে মুসলিম লীগের কোন অধিবেশনে সেকান্দর হোসেন অনুপস্থিত থাকেননি।
দ্বীপের রাজনীতির অন্যতম ব্যক্তিত্ব সেকান্দর হোসেন মিয়ার সমগ্র জীবনের সিংহভাগই ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল। তিনি গোটা জীবন সমাজ হিতে কাজ করে গেছেন অথচ কোন পার্থিব খ্যাতি বা স্বার্থের কথা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেননি। আত্মপ্রচার বিমুখতার কারণে সেকান্দর হোসেন মিয়া বৃহত্তর সমাজে বা জাতীয়ভাবে কখনো পরিচিতি লাভ করেননি। তাঁর নিঃস্বার্থ সমাজ সেবার যোগ্য প্রতিদান, যথার্থ স্বীকৃতি তিনি কখনো পাননি।
রাজকুমার চক্রবর্তী সন্দ্বীপের ন্যামস্তি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হরে কৃষ্ণ চক্রবর্তী। রাজকুমার চক্রবর্তী ১৯১২ খৃষ্ট॥ব্দে নোয়াখালী জিলা স্কুল হতে ম্যাট্রিক, ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে কলকাতা রিপন কলেজ হতে আই.এ ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে ঐ কলেজ হতে বি.এ এবং ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজী সাহিত্যে এম এ. পাস করেন। রাজকুমার চক্রবর্ত্তী সন্দ্বীপের ৭ম গ্র্যাজেয়েট এবং দ্বিতীয় এম এ.। তিনি ১৯২০ সালে আইন পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হন এবং ঐ সাল হতে কলকতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা আরম্ভ করেন। রাজকুমার চক্রবর্ত্তী বহু বছর সন্দ্বীপ কংগ্রেস ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৭ খ্রীস্টাব্দে রাজকুমার চক্রবর্তী কংগ্রেস দল থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ও পরিষদের ১১ সদস্য বিশিষ্ট কংগ্রেস দলের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৯ সাল থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত রাজকুমার চক্রবর্তী কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক ছিলেন। তিনি ১১ বছরের উর্ধ্বকাল যাবত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। দু’বার তিনি নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৩০ সালে আইন অমান্য আন্দোলন, ১৯৪১ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। এসময় তিনি কারাবরণও করেন। তরুণ বয়সে রাজকুমার বাবু ‘যুগান্তর ’ দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ২৩ বছর বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি ও নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৫২ সালে রাজকুমার চক্রবর্তী কংগ্রেস ত্যাগ করেন। অনঙ্গ মোহন দাস (মোক্তার) সহ রাজকুমার চক্রবর্তী ১৯২৪/২৫ সালে সন্দ্বীপের ইতিহাস রচনা করেন। সন্দ্বীপকে চট্টগ্রাম জেলায় অন্তভূর্ক্ত করার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের নিকট সন্দ্বীপের লক্ষাধিক লোকের স্বাক্ষর করা দরখাস্ত তিনি পেশ করেছিলেন। তিনি তাঁর সমগ্র জীবনের সঞ্চয় ৩ লক্ষাধিক টাকা কলকাতায় ছাত্র কল্যাণ ও আর্তত্রাণে দান করে গেছেন। ৫০ দশক হতে রাজকুমার চক্রবর্তী ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। অকৃতদার অধ্যাপক রাজকুমার চক্রবর্তী আমৃত্যু শিক্ষা, সমাজসেবা ও রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন।
সৈয়দ আবদুল মজিদ সন্দ্বীপ থানার কাটগড় গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯১৯ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.এ এবং পরবর্তীতে রিপন কলেজ হতে বি.এল পাস করেন। আবদুল মজিদ সন্দ্বীপের ১০ম কিনত্ত মুসলমানদের মধ্যে ৪র্থ গ্র্যাজুয়েট। বি.এল পাস করার পর তিনি নোয়াখালীতে আইন ব্যবসা আরম্ভ করেন। নোয়াখালীতে মুসলিম লীগ গড়ায় তাঁর অবদান ছিলো অতুলনীয়। তিনি ১৯২৭ ও ১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দে নোয়াখালী জেলা বোর্ডের এবং ১৯৩২ খ্রীষ্টাব্দে লোকাল বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দে তিনি নোয়াখালী জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘ ১১ বছর যাবৎ নোয়াখালী জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে তিনি সমগ্র জেলায় বহু হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, সেতু, স্কুল ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মুসলিম লীগ নমিনেশনে ১৯৩৭ সালে সন্দ্বীপ-হাতিয়া হতে অবিভক্ত বাংলার আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিতহন। ১৯৪৩সালে তিনি পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী নিযুক্ত হন। তিনি নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগের কার্যকরী সংসদের সদস্য ও কাউন্সিলার ছিলেন দীর্ঘদিন। সৈয়দ আবদুল মজিদ বহুবছর নোয়াখালী জেলা স্কুল বোর্ড, জেলা মুসলিম লীগ ও বার অ্যাসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট এবং উমা গার্লস হাই স্কুলের সেক্রেটারী ছিলেন। তিনি কিছুকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টেরও সদস্য ছিলেন। ১৯২৫-২৬ সালে তিনি কলিকাতাস্থ নোয়াখালী অ্যাসোসিয়েশন এর জেনারেল সেক্রেটারী ছিলেন।
অধূনালুপ্ত ইজ্জতপুর ইউনিয়ন ছিলো ন্যামস্তি ও আমিরাবাদের ন্যায় সন্দ্বীপের আরো একটি সমৃদ্ধশালী ও ঐতিহাসিক জনপদ। মোগল ফৌজেন সেনানিবাস ছিলো এই প্রসিদ্ধ ইজ্জতপুর গ্রামে। ইজ্জতপুর ও রুহিনী গ্রামে বহু সম্ভ্রান্ত মোগল রইসদের বাসস্থান ছিলো। কালক্রমে এই সেনাদলের বৃহত্তর অংশ বিয়েশাদী করে সন্দ্বীপে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। আর এই ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত গ্রামে ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে মৌলভী ফজলুল করিম সাব-ডেপুটি সাহেবের জন্ম হয়। তাঁর পিতা ছিলেন মৌলবী খবির উদ্দীন। মৌলভী খবির উদ্দীন কলিকাতা মাদ্রাসায় উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। তাঁহার সতীর্থ ছিলেন প্রসিদ্ধ মোগল সেনাধ্যক্ষ হিসেবে অভিহিত দাইন বাহাদুরের উত্তর প্রজন্ম প্রখ্যাত শমসের উকিলের কনিষ্ঠ পুত্র মরহুম মৌলভী রিয়াজ উদ্দীন। তাঁহারা একই বংশের অন্তর্গত এবং একই সময় কলিকাতা মাদ্রাসায় লেখাপড়া সমাপ্ত করেন।
মৌলভী ফজলুল করিমের পিতার নাম মৌলভী খবির উদ্দীন। ফজলুল করিম নোয়াখালী জেলা স্কুল হতে এন্ট্রান্স ও হুগলী মাদ্রাসা হতে এফ.এম (কারো কারো মতে এফ.এ) পাস করেন। তিনি আরবী, ফার্সী, উর্দু, ইংরেজী ও অংক শাস্ত্রে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি প্রথমে কানুনগো পদে সরকারী পদে চাকুরী করেন। সততা ও যোগ্যতার সাথে উক্ত রাজকার্য সম্পাদন করে তিনি সংকারের প্রশংসাভাজন হন এবং সাব-ডিপুটির পদে উন্নীত হন। ১৯৩৭ সালে তিনি সরকারী চাকুরী হতে অবসর গ্রহণ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি বেশ কিছুদিনসন্দ্বীপ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬০ সালে তিনিইনজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর সন্তানদের মধ্যে ড. সোলায়মান মেহেদী শিক্ষাবিদ হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। মৌলভী ফজলুল করিম মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পরিচালিত পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
জনাব এ.ডি.এম.এম মাওলা ওরফে জামসেদ মিঞা ৩ মে ১৯২৯ সালে সন্দ্বীপের রহমতপুর গ্রামে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৌলভী দেলোয়ার হোসেন। তিনি ১৯৪৮ সালে সন্দ্বীপ হাই স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৫০ সালে আই.এ পরীক্ষায় ১ম বিভাগে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ এম.এ ডিগ্রী এবং ১৯৫৫ সালে এল.এল.বি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র আন্দোলনের সাথে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছিলেন। বিশেষ করে সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র থাকাকালীন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং মাইকযোগে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদেরকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন্ তাই আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম গৌরবময় ভাষা আন্দোলনে তাঁর অবদান বিশেসভাবে উল্লেখযোগ্য। এল.এল.বি পাস করার পর তিনি চট্টগ্রামের নাজিরহাট কলেজে এক বছর অধ্যাপনা করেন।
পরবর্তীতে তিনি সন্দ্বীপ আদালতে আইনপেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি রহমতপুরের তৎকালীন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান হাজী আব্দুল বাতেন সওদাগরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৭০ পর্যন্ত উক্ত পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৬৫ সালে সন্দ্বীপ-সীতাকুণ্ড কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এম.পি.এ) নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করেন। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য থাকাকালীন সময়ে সন্দ্বীপের অনেক উন্নয়নমূলক কাজে তিনি অবদান রাখেন। তিনি সন্দ্বীপ হাজী এ.বি. কলেজ ও সীতাকুণ্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা মেম্বার ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। তিনি অত্যন্ত সদালাপী, সৎ সাহসী ও পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন। ১৯৮৯ সালের ১৪ মে তিনি সন্দ্বীপস্থ নিজ বাসভবনে ইন্তেকাল করেন।
সাহিত্যিক সাংবাদিক ও রাজনীতিক মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ সন্দ্বীপ থানার বাউরিয়া গ্রামে ১৯০৭ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রমিজ আলী সারেং এবং মাতার নাম রকিমুন্নেছা। ওয়ালী উল্লাহ ১৯২৪ সালে কার্গিল হাই স্কুল হতে এন্ট্রান্স পাস করেন। কিন্ত্ত আই.এ পাস করেন ১৯৩২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ হতে। প্রথমে চট্টগ্রাম কলেজে ও পরে বি.এম কলেজ এ অনার্সে ভর্তি হয়েও তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। তিনি ১৯৪৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সরকারী চাকুরীতে যোগ দেন এবং ১৯৬৭ সালে তথ্য দফতরের সাব-এডিটরের পদ হতে অবসর নেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হচ্ছে ঃ সংবাদ ও সাংবাদিক (১৯৪৩) , সেকালের কথা (৩ খণ্ড)(১৯৪৯), সেকালের কাহিনী (১৯৫০), ফাঁসীর মঞ্চে (১৯৫২), বিচিত্র জীবন (১৯৫২), সেকাল ও একাল (১৯৫২), আমাদের মুক্তি সংগ্রাম (১৯৫৩), যুগ-বিচিত্রা (১৯৬৭ সালে দাউদ পুরস্কার প্রাপ্ত), জীবন জাগার কাহিনী (১৯৮২)। মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক ছিলেন। এগুলোর মধ্যে ওরিয়েন্ট প্রেস অব ইণ্ডিয়া, রেঙ্গুন ডেইলী নিউজ, স্টার অব ইণ্ডিয়া, দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক আজাদ, দৈনিক পয়গাম ও পাক জমহুরিয়াতের নাম উল্লেখযোগ্য। ওয়ালীউল্লাহ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন। একারণে সন্দ্বীপে তিনি ওলি-গান্ধী নামেও খ্যাত ছিলেন। পাকিস্তান আন্দোলন এবং পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। জীবনের শেষভাগে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী) সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সাথেও তিনি বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭৩ সালে ওয়ালী উল্লাহ অন্যায়, অবিচার, জুলুম, রাহাজানির বিরুদ্ধে সাতদিন ঢাকায় আমরণ অনশন ধর্মঘট করেন। তৎকালীন সরকার সব অনাচার দমনের ওয়াদা দিলে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন। ১৯৭৩ সালে মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সন্দ্বীপ হতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হতে পারেননি। মোহাম্মদ ওয়ালী উল্লাহ কলিকাতাস্থ ও ঢাকাস্থ সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সন্দ্বীপকে চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্তির আন্দোলনের পক্ষে তিনি একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন এবং ঐ আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মুখে সোনার চামচ নিয়ে জন্মালেও শেষ জীবন খুব সুখের হয়নি। অবশেষে ১৯৭৮ সালের ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে পি.জি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। শাহজাহানপুর গোরস্থানে তাকেঁ সমাহিত করা হয়।
সন্দ্বীপের কালো মানিক বা ব্ল্যাক জুয়েল নামে খ্যাত মৌলভী আব্দুল মন্নান উত্তর হরিশপুরের ফতেহর (হতের) গো বাড়ীতে এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে বশিরিয়া মাদ্রাসা হতে জামায়াতে উলা পাস করেন। তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন সন্দ্বীপ হাই স্কুল হতে এবং ১৯৪৪ সালে বি.এ পাস করেন কুমিলত্মা ভিক্টোরিয়া কলেজ হতে। বাংলা, ইংরেজী এবং আরবী তিন ভাষাতেই ছিলো তাঁর সমান পারদর্শিতা। হস্তাক্ষর ছিলো খুবই সুন্দার। টেবিল টকে সন্দ্বীপে তাঁর জুড়ি ছিলোনা। অত্যন্ত খোদাভক্ত ছিলেন মৌলভী আব্দুল মন্নান। মৌলভী আব্দুল মন্নান মসজিদের চার দেয়ালের মধ্যে তাঁর ইবাদতকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। আপন গৃহভৃত্যকে আপন পিতৃতুল্য স্নেহে বড় করে নিজ খরচে তার বিয়ের ব্যববস্থা পর্যন্ত করে দিয়েছিলেন। কিনত্ত এখানেই তিনি তাঁর দায়িত্ব শেষ করেননি। ঐ গৃহভৃত্যের পাঁচটি নাবালক/নাবালিকা ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ ও পড়ালেখার দায়িত্বও গ্রহণ করেছিলেন তিনি হাসিমুখে। ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি সন্দ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় নিজেকে জড়িত করেছিলেন। ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন দশকের উর্ধ্বকাল সন্দ্বীপ টাউনের সবচেয়ে সদালাপী এবং পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব কে ছিলেন? কার সান্নিধ্যে সমসাময়িক ঘটনাবলী , রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও দাশৃনিক সব আলোচনায় সন্দ্বীপ টাউনের সুধীজন পেতেন এক আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব? জবাব ছিলো একটি। শ্মশ্রুমণ্ডিত, শ্রামলা চেহারার পায়জামা-পাঞ্জাবী পরিহিত মৌলভী আব্দুল মন্নান। সন্দ্বীপের সুধীজনের কাছে তিনি ব্ল্যাক জুয়েল বা কালো মানিক। ১৯৮১ সালে এই জ্ঞানতাপস ইন্তেকাল করেন।
জনাব আলী আকবর বি.এ,বি.টি সন্দ্বীপের মগধরা গ্রামে ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সী বুশরা উল্লাহ তালুকদার এবং মাতার নাম অলিজান বিবি। তঃকালে সন্দ্বীপে যাঁরা শিক্ষার আলোকবর্তিকা জ্বালিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আলী আকবর বি.এ,বি.টি অন্যতম। গ্রামের মক্তবে তিনি ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন অতঃপর পাঠশালায় ভর্তি হন। ঐ পাঠশালা হতে চতুর্থ শ্রেণীতে বৃত্তিলাভ করে তিনি সবার দৃষ্টিগোচরে পড়েন। তনি পূর্ব সন্দ্বীপ জনিয়র স্কুলে ভর্তি হন এবং অষ্টম শ্রেণীতে মেধা তালিকায় বৃত্তিলাভ করেন। অতঃপর তিনি কার্গিল ইংরেজী স্কুলে ভর্তি হন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্যের জন্য হাজী মোহাম্মদ মহসীন ফাণ্ডের বৃত্তি ও স্যার কারমাইকেল মেডেল লাভ করেন। ১৯২৪ সালে উক্ত স্কুল হতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা, ইংরেজী ও অংকে লেটারসহ মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম কলেজ হতে বাংলা ও ইংরেজীতে লেটারসহ উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি সফলতার সাথে বি.এ পাস করেন। অতঃপর ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হতে ব্যাচেলর ইন ট্রেনিং লাভ করেন। চাকুরী জীবনের শুরুতে তিনি বাউরিয়া জি.কে একাডেমী, হাটহাজারীর পার্বতী হাই স্কুল, রংপুরের একটি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জে বসুরহাট হাই স্কুল এবং পরবর্তীতে সন্দ্বীপ মডেল হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহন করেন। তাঁর চেষ্টায়, অক্লান্ত পরিশ্রমে সন্দ্বীপে মুসলিম শিক্ষার জন্য সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলটি ইস্ট পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের অধীনে একটি শ্রেষ্ঠ স্কুলে পরিণত হয়। এ মহান পুরুষ দ্বীপের শিক্ষাগুরু ১৯৫৬ সালের ১৮ নভেম্বর রোজ রবিবার বেলা ২ টায় ক্লাস শেষে নিজ অফিস কক্ষে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আকস্মিকভাবে ইন্তেকাল করেন। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে, তিন মেয়ে, এক স্ত্রী ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে যান।
মৌলবী আবুল খায়ের খান সন্দ্বীপের মগধরা গ্রামে বাংলা ১৩১০ সনের আষাঢ় মাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্সী আবদুল করিম খান। আবুল খায়ের খান প্রথমে সাতঘরিয়া প্রাইমারী বোর্ড স্কুলে এরপর মুছাপুর এম.ই স্কুলে পড়াশুনা করেন এবং নোয়াখালী জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে এম.ই বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি কার্গিল হাই স্কুল হতে দুই বিষয় ব্যতীত সকল বিষয়েই ডিস্টিংশন সহ শতকরা ৮৮ b¤^i পেয়ে এন্ট্রান্স পাশ করেন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ হতে ১৯২৭ সালে আই.এ, ১৯২৯ সালে বি.এ এবং ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হতে ১৯৩৮ সালে বি.টি পাস করেন।
খান আবুল খায়ের কলকাতায় Administrator General abd Official Trustee of Bengal অফিসে প্রথমে চাকুরী নেন। তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে ১৯৩৩ সালে সন্দ্বীপ হাই স্কুলে, ১৯৩৮ কাটগড় গোলাম নবী হাই স্কুলে, ১৯৪১ সালে রাঙ্গুনিয়া হাই স্কুলে, ১৯৩৮-৪১ এর মধ্যে দ্বিতীয়বার সন্দ্বীপ হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৪২ সালে সন্দ্বীপ হাই স্কুলের এবং ১৯৪৭ সালে সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাস্টার নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭০ সালে সাউথ সন্দ্বীপ হাই স্কুল হতে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি হজ্বব্রত পালন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি মগধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। কৃতি শিক্ষাবিদ আবুল খায়ের খান সন্দ্বীপ ও সংলগ্ন অঞ্চল সমূহে ‘হেডমাস্টার সাহেব’ নামে খ্যাত ছিলেন। সন্দ্বীপের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তির জীবন গঠনেও আবুল খায়ের খানের ভূমিকা ছিল অনন্য। ইংরেজী ১৯৩৩ হতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই মহান শিক্ষাবিদ দৃঢ় নৈতিকতা, কঠোর নিয়ামানুবর্তিতা ও তেজোদ্দীপ্ততার সাথে শিক্ষার আলো বিকীরণ করে অগণিত সুযোগ্য ছাত্র-ছাত্রী তৈরী করে গেছেন।
ওসমান গণি তালুকদার
সন্দ্বীপে হেডম্যান, প্রেসিডেন্ট,চেয়ারম্যান ও ঋণ সালিশী বোর্ডের বিচারক হিসেবে যাঁরা খ্যাতি লাভ করেছেন, তাদেঁর মধ্যে মুছাপুর গ্রামের ওসমান গণি তালুকদার এর নাম নানা কারণে উল্লেখযোগ্য। ওসমান গণি তালুকদার ৩৭ বছর মুছাপুর ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট থেকে নিঃস্বার্থ ভাবে জনসেবা করে গেছেন। কার্গিল হাই স্কুল, বশিরিয়া মাদ্রাসা ও সন্দ্বীপ হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হিসেব�
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS