সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ এজেন্ডা তথা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) এবং নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর। এই উদ্দেশ্যকে সম্মুখে রেখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট (জিআইইউ) নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় জিআইইউ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় “আমার গ্রাম আমার শহর” আদর্শকে ধারণ করে প্রতিটি জেলায় / উপজেলায় ‘স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন’ বিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২০১৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত মেয়াদের বৈশ্বিক এ উন্নয়ন এজেন্ডা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রণয়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। এসডিজির ১৭ টি অভীষ্টের আওতায় ১৬৯ টি লক্ষ্যমাত্রার প্রতিটির জন্য ইতোমধ্যে lead/co-lead ও associate মন্ত্রণালয়/ বিভাগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তিকল্পে ইতোমধ্যেই ‘Data Gap Analysis’ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও সম্পদের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিতকরণ পূর্বক ‘SDGs Needs Assessment and Financing Strategy’ প্রণীত হয়েছে। অধিকন্তু, সকল মন্ত্রণালয়/ বিভাগ কর্তৃক এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা (Action Plan) প্রণয়ন করা হয়েছে। যেহেতু এসডিজি মূলত একটি বৈশ্বিক উন্নয়ন এজেন্ডা এবং এর বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি বিষয়, কাজেই যথাযথভাবে এটি অর্জনের জন্য স্থানীয়করণ (localization) ও অগ্রাধিকার নির্ণয়ের কোন বিকল্প নেই।
এজেন্ডা ২০৩০-তে ১৭টি অভীষ্টের আওতায় ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৩২টি সূচক রয়েছে। সূচকসমূহ সকল দেশের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য নয়। অনেক দেশের জন্যে বেশকিছু সূচক প্রযোজ্য নয়। সূচক সমূহের ব্যাপ্তি এত বিস্তৃত যে সবগুলো সূচক বাস্তবায়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। অন্য দিকে বেশকিছু সূচক রয়েছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নিবিড়ভাবে বাস্তবায়ন করলে অন্য অনেক সূচক আপনা আপনি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রাসমূহ পারস্পরিকভাবে সম্পর্কিত। কোন একটি লক্ষ্যমাত্রায় ভালো ফলাফল প্রত্যাশা করা মানে এর সাথে যুক্ত সকল সূচকে ভাল ফলাফল নিশ্চিত করা। ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার এবং চাহিদার আলোকে এসডিজির সূচকের অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয়ন করছে। সকল দেশ অবশ্যই সকল লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর, তবে এই পদ্ধতি এসডিজি বাস্তবায়নের একটি স্থানীয় কৌশল হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, বাংলাদেশে ‘এসডিজি ওয়ার্কিং টিম’ এর তত্ত্বাবধানে ৩৯টি সূচকের মাধ্যমে ‘সূচকের ভিত্তিতে বাংলাদেশের এসডিজি অগ্রাধিকার তালিকা’ প্রস্তুত করা হয়েছে (সংযুক্ত)। উল্লেখ্য, ০১ টি অতিরিক্ত সূচক সংশ্লিষ্ট জেলা/উপজেলা যে বিষয়ে তুলনামূলক পিছিয়ে আছে সেখান থেকে নিজস্ব বিবেচনায় (প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে) গ্রহণ করবে। জেলা ও উপজেলার প্রশিক্ষণ কর্মশালার মাধ্যমে প্রতি জেলা হতে একটি সূচক নির্ধারিত হবে। স্থানীয়ভাবে এই অতিরিক্ত ০১ টি সূচক নির্ধারণ ‘স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন’ বিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার অন্যতম মূল উদ্দেশ্য। আশা করা যায়, এই ৪০ টি সূচকের (৩৯+১) অগ্রাধিকার তালিকা মোতাবেক জেলা, উপজেলা ও স্থানীয় পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরে এসডিজি পরিবীক্ষণ এবং বাস্তবায়ন সম্ভব হবে এবং দ্রুত ও সফলতার সাথে এসডিজি বাস্তবায়ন এবং সর্বোপরি দেশের চলমান উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। ফলে, সমগ্র দেশের জন্য মোট অগ্রাধিকার সূচক / টার্গেট হবে (৩৯ + ৬৪)টি যা যেকোন একটি নির্দিষ্ট জেলার ক্ষেত্রে (৩৯+১) হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
স্থানীয় পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নের নিরিখে নাটোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘স্থানীয় করণের মডেল’ ইতোমধ্যে প্রসংশিত হয়েছে। যেখানে জেলা পর্যায়ের সকল সরকারি দপ্তরের আগামী ২০৩০ পর্যন্ত স্থানীয় চাহিদাকে বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যতের জন্য ‘টেকসই বাংলাদেশ’ গড়ার মানষে দপ্তর ভিত্তিক কৌশল, কর্মকান্ড এবং সূচক নির্ধারণ করেছে। আশা করা যায় একই ভাবে যদি সকল জেলাসমূহ কৌশল পত্র প্রণয়ন করে, তাহলে কেন্দ্রিয় ভাবে এসডিজি বাস্তবায়ন কৌশল এবং কর্মকান্ড নির্ধারণ বা পুনঃনির্ধারণ সহজ হবে।
প্রথম পর্বে, বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মশালা; প্রশিক্ষক প্রস্তুতির জন্য আয়োজন করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারগণের তত্ত্বাবধানে জেলা প্রশাসকগণের নেতৃত্বে জেলা পর্যায়ে এবং জেলা প্রশাসকগণের নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন পেশার অংশীজনের মতামত গ্রহণের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হবে।
কর্মশালায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারিবৃন্দ নিম্নোক্ত বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন।
১. অগ্রাধিকার (৩৯+১) সূচক সমূহ সম্পর্কে ধারণা লাভ
২. অগ্রাধিকার সূচক সমূহের বিপরীতে স্থানীয় করণীয়
৩. প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় অগ্রাধিকার সূচক নির্ধারণ
৪. এসডিজি স্থানীয় করণের ক্ষেত্রে ‘নাটোর মডেল’ সম্পর্কে ধারণা লাভ
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS